নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গুরা বাজার এলাকায় মাদক চোরাকারবারের অভিযোগ তুলে এক ভয়াবহ মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন—রুবি বেগম (৫৮), তার ছেলে রাসেল (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৭)। ঘটনাটি ঘটে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাঙ্গুরা বাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাহিদ জানান, স্থানীয় কিছু লোক এই পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে। এরপর উত্তেজিত জনতা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনির প্রবণতার একটি নতুন ও ভয়াবহ উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৪১টি মব হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৮৯ জন।
সর্বাধিক মব হামলার ঘটনা ঘটেছে মার্চ মাসে, যেখানে ৩৯টি হামলায় নিহত হন ১৩ জন এবং আহত হন ৯৬ জন।
এই ভয়াবহ চিত্র দেশের বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যও এই সহিংসতার উৎসাহদাতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, “আপনারা যেটাকে মব বলছেন, আমি সেগুলোকে মব বলছি না, এটা প্রেসার। যারা ১৫ বছর ধরে নিপীড়িত হয়েছেন, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।”
এই ধরনের বক্তব্য অনেকের কাছে মব ন্যায়বিচার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেও মনে হচ্ছে, যা দেশে আইনের শাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মব সন্ত্রাসের যে চিত্র উঠে আসছে, তা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের লক্ষণ বলে অনেকেই মনে করছেন। নিরীহ মানুষ বারবার মবের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার হচ্ছে না বা অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্র যদি আইনের শাসন নিশ্চিত না করতে পারে, তবে এ ধরনের সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়বে এবং নিরপরাধ মানুষের জীবন আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই ধরনের ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রাষ্ট্রকে কার্যকর বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার যে প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।